NYnews52.com a e-news paper in Bengali and English with video excerpts.
Logo: NYnews52.com

Back to Front Page

মুক্তচিন্তা


কিসের এতো কথা


বেলাল বেগ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিকিৎসা

বাংলাদেশ ও আমার রোগভোগের গল্প প্রায় এক রকম। গত বছর আমাকে নিয়ে যমে মানুষে টানাটানি হয়েছিল। শুরুটা ছিল জিয়াউর রহমান কর্তৃক পলাতক গোলাম আযমকে মায়ের অসুখের কারণে বাংলাদেশে আসতে দেয়ার সন্দেহাতীত একটি মামুলি ঘটনার মত । সামান্য ফ্লু হয়েছিল; টাইলানল খেয়ে ভাল হয়েছি বলে মনে হল। ক’দিন পরে দেখা গেল, মুখে খাওয়া রোচেনা, ক্ষুধা লাগে না এবং গায়ে সামান্য জ্বর ভাব। ডাক্তার অনেকগুলি পরীক্ষার ফলপ্রাপ্তি সাপেক্ষে মাস খানেক পরে দেখা করতে বললেন আর এও বলে দিলেন, গায়ের জ্বর যদি বেড়ে যায়, হাসপাতালে জরুরী বিভাগে যেন চলে যাই। ক’দিন পরেই ঘটনাটা ঘটল। জরুরী বিভাগ কোন হদীস করতে পারলনা; অনেক কিছুই হতে পারে: যক্ষা, টায়ফয়েড, ক্যান্সার ইত্যাদি বহু কিছু। তবে যক্ষা সন্দেহটা বেশি হওয়ায় আমাকে অচ্ছুত ও একঘরে করে দেয়া হল হাসপাতালে। শুরু হল নানা জাতীয় ডাক্তার দলের হামলা। হাজারো পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন রক্ত নেয়া হচ্ছে; আমাকে ট্রলীতে করে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পরীক্ষাগারে-রক্ত, মাংস, মজ্জা, হৃদপিণ্ড, পাকস্থলি, বৃক্ক কোথায় বসে কোন শত্রু এ নিরীহ গোবেচারা মানুষটিকে কাবু করে দিচ্ছে খুঁজে বের করতে হবে। খুঁজে কেউ কিছু পেল না। আরো বিশেষজ্ঞ এল। তাও কিছু হল না। তবে আমার ফুসফুসে একটু ধোঁয়াটে মত দাগ পাওয়া গেল। শেষ পর্যন্ত একজন বিশেষজ্ঞ রায় দিলেন আমার সারকয়ডোসিস হয়েছে। যখন রোগ পাওয়া যায়না অথচ লক্ষণ আছে তার চিকিৎসার জন্য এ নামটি দেয়া হয়। এর চিকিৎসায় কোন ঔষধ নেই, স্টেয়রড দিতে হয়। সেটাও ঝুঁকিপূণ-চুল কালো হয়ে যাওয়া, চোখের দৃষ্টিতে, খাদ্য পরিপাক যন্ত্রে, শরীরে অস্বাভাবিক শক্তি সঞ্চয় ইত্যাদি নানা গোলযোগ দেখা দিতে পারে। ওরকম কিছু হওয়া মাত্রই যেন হাসপাতালে ছুটে আসি ঐ পরামর্শ দিয়ে আমাকে বিদায় দেয়া হল প্রায় দেড় মাস পরে। মাস যেতে না যেতেই একদিন ভয়ানক পেটব্যথায় চীৎকার করতে করতেই আবার হাসপাতাল পৌঁছালাম। জরুরী বিভাগ একরাত রেখে ভোরে ছেড়ে দিল- এটা নাকি বদহজমের ব্যাপার। পারিবারিক ঘনিষ্ঠ একজন বাঙালী ডাক্তার বেড়াতে এসে পূরো কাহিনী শুনে বললেন, আমি ভুল চিকিৎসার শিকার। হাসপাতালের সেই বিশেষজ্ঞকে জানাতেই তিনি দেখা করতে যেতে বললেন। হাসপাতালে পৌঁছাতেই আমাকে নিয়ে যাওয়া হল একটা ছোটখাট অপারেশন থিয়েটারে। এনাসথেশিয়া দিয়ে পিটুইটারী গ্লান্ড থেকে নমুনা নেয়া হল। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে নেয়া হল। রোগ পাওয়া গেছে-আমার শরীরে একটা উদ্ভিদজাত সংক্রমণ ঘটেছিল। তিনদিনের মাথায় প্রায় ছয়মাস পরে এই প্রথম সুস্থ বোধ করে হাসপাতাল ছাড়ার অনুমতি পেলাম। (দুর্ভাগ্য তাও সহজে ছাড়েনি। সার্বক্ষণিক চালু সুঁইফুটায় সংক্রমণ হয়ে আরো প্রায় দুসপ্তাহ হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল এবং পরিস্থিতি প্রায় প্রাণনাশের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল)।

স্বাধীনতার ভয়ঙ্কর শত্রুরাই মন্ত্রী হয়ে পড়ায়, আমার মতই বাংলাদেশের মৃত্যু ঘন্টা বেজেছিল। গোলাম আযমের মায়ের অসুখের মত সামান্য ছুঁতাই যে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ভবিষ্যতকে এমন জটিল ও ভয়াবহ করে দিয়েছিল, তা আবিষ্কার করতে আমাদের প্রায় পঁচিশ বছর লেগেছিল। যখনই আমরা আবিষ্কার করলাম, সংগে সংগেই আমরা স্বাধীনতা যারা এনেছিল সেই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিলাম ঘটা করে। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসিতে চড়াতেও দেরী হল না। মূল রোগ ধরা পড়ায় সঠিক ঔষধটাও এখন প্রয়োগ করা হচ্ছে-একাত্তরের শত্রুদের সম্পূর্ণ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশের ঘাতক-ব্যাধী ‘জামাতে ইসলামি’র ‘ক্যারিয়ার’ জিয়াউর রহমানের বিএনপি এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক রোগমুক্তি তাদেরই রাজনৈতিক মৃত্যু নিশ্চিত করবে। তারা এটা হতে দিতে পারে না। তাই, স্বাধীনতার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তার পতনের ষড়যন্ত্রে তারা মেতে উঠেছে। সংসদ অকার্যকর করা, সরকার অযোগ্য, অকর্মন্য, দূর্নীতিবাজ, ব্যর্থ ও ভারতের দালাল প্রমাণ করার জন্য তারা আদাজল খেয়ে নেমেছে। বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাস, পানি, টিপাইমুখ বাঁধের ভারতীয় ষড়যন্ত্র, হাসিনা-পুত্রের দূর্নীতি ইত্যাদি কত কত মারণাস্ত্র তারা প্রয়োগ করেছে! কিন্তু জনগণ ও সরকারের গায়ে তা ফুলের আঁচড়ও কাটছেনা।
বিএনপি এতকাল যে মিথ্যেবাদী রাখালের মত বাঘ বাঘ বলে জনগণকে আগুন, বন্দুক, টেঁঠা, বল্লম হাতে ছোটাছুটি করিয়েছে। এখন যখন সত্যি সত্যি বাঘ এসেছে, জনগণ তার উদ্ধারে আর এগিয়ে আসছে না।

এ গল্পের উপাদেশ : যে রাষ্ট্রে জনগন ও সরকার সুখদুঃখে এক থাকে, সে রাষ্ট্রের শত্রু থাকতে পারেনা।





Contact Us